সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ধ্বংসাত্মক পাঁচ অপরাধ

ধর্ম ডেস্ক:

আল্লাহর অবাধ্যতা কোনো অবস্থায়ই মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়। যে ব্যক্তি যতবেশি আল্লাহর অনুগত হবে, তার জীবন ততবেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। পক্ষান্তরে যে আল্লাহর অবাধ্য হবে ইহ ও পরকালে তার জীবন ততবেশি সংকটাপন্ন হয়ে উঠবে। এখানে এমন পাঁচটি ধ্বংসাত্মক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলোর কারণে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের বিনাশ নিশ্চিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

জাদু শিক্ষা

দুনিয়া ও আখেরাতের বিবেচনায় ক্ষতিকর নয়, এমন জাদু শিক্ষা ও শিক্ষা দেওয়া জায়েজ। কিছু জাদু এমন রয়েছে, যেগুলো দুনিয়া ও আখেরাতের বিবেচনায় ক্ষতিকর, এমন জাদু নিজে শিক্ষা করা কিংবা অপরকে শিক্ষা দেওয়া জায়েজ নয়। যেমন- কুফর ও শিরকি কথাযুক্ত জাদু। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় এমন জাদু। অন্যের ক্ষতিসাধন করে এমন জাদু। কিছু জাদু মানুষকে কাফের পর্যন্ত বানিয়ে দেয়। তাই কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে জাদু করা, জাদু শিক্ষা করা কিংবা শিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা নিতান্ত অপরিহার্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শয়তানরা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালোরূপে জানেন যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।’ -সুরা বাকারা : ১০২

অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা

মানুষ যেসব বস্তুকে ভালোবাসে তার মধ্যে সর্বাগ্রে অবস্থান করে তার প্রাণ। প্রতিটি মানুষ তার প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। পৃথিবীতে কারও অধিকার নেই অন্যায়ভাবে অন্যকোনো ব্যক্তির প্রাণ হরণের। কোরআন মাজিদে একজন মানুষের অন্যায় হত্যাকে সব মানুষকে হত্যা করার নামান্তর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তাকে অভিসম্পাত করেন এবং তার জন্য ভয়ংকর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ -সুরা আন নিসা : ৯৩

সুদের লেনদেন

সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক ও সাক্ষী হওয়া এমন এক মারাত্মক অন্যায় ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ, যার ওপর স্বয়ং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, যারা সুদের আদান-প্রদান করবে তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যে সব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাকো। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচারস কোরো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।’ -সুরা আল বাকারা : ৭৮-৭৯

এতিমের মাল আত্মসাৎ

অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান রেখে যখন কোনো পিতা মৃত্যুবরণ করেন তখন সেই সন্তান অনেকাংশে অভিভাবকহীন ও অসহায় হয়ে যায়। পিতার অকৃত্রিম স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়। অনাথ এই শিশুর দুরবস্থায় তার আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো- তাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা। তাকে লালন-পালন ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। যথাযথভাবে তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনাথ শিশুর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সমাজের কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি তার সম্পদ আত্মসাৎ করে। তাকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে। এমনটি করা অত্যন্ত অমানবিক ও চরম অন্যায় কাজ। এতিমের মাল কুক্ষিগত করা পেটে আগুন ভরার নামান্তর। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’ -সুরা আন নিসা : ১০

সতী নারীর প্রতি অপবাদ

সমাজে বহু মুসলিম নারী এমন রয়েছে, যারা স্বভাবগতভাবে সতী-সাধ্বী। তারা অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার ধার ধারে না। অশালীনতা, চরিত্রহীনতা এবং ব্যভিচারের ধারেকাছেও তারা যায় না। এমন চরিত্রবান নারীদের চরিত্র নিয়ে কটূক্তি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া অন্যায় ও চরম অপরাধ। যেসব লোক ইমানদার সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীদের ওপর অপবাদ আরোপ করবে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে ধিকৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ শাস্তির সম্মুখীন হবে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ইমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ -সুরা আন নুর : ২৩

এখানে যে পাঁচটি পাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো নিতান্ত অন্যায় ও চরম অপরাধ। এছাড়া আরও ধ্বংসাত্মক অনেক পাপ রয়েছে। সেগুলো থেকেও বিরত থাকা মুসলমানদের কতর্ব্য। আল্লাহতায়ালা সবাইকে ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION